নদী কি ?নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা

নদী কী? এবং নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।আমাদের বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত।আমাদের দেশে ছোট বড় অনেক নদী রয়েছে ।পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ছোটো বড় অনেক নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
 
 
এই সকল নদী আমাদের মানবজীবন ও জীব বৈচিত্র কি কি উপকার করে থাকে এবং কি কি অপকারিতা রয়েছে এবং এই  প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে জেনে নিন।

পোস্ট সুচিপত্রঃনদী কি ?নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা 

নদী কি

নদী কি শ্রোতা বন্ধুরা আপনারা কি জানেন ? নদী যেমন প্রকৃতির একটি সৌন্দর্যের নাম ঠিক তেমনি নদীর রয়েছে সুন্দর একটি সংজ্ঞা। নদী মূলত প্রকৃতি সৃষ্ট পানির ধারা যা ভূপৃষ্ঠের উঁচু জায়গা থেকে নিচু জায়গায় প্রবাহিত হয়।আপনি যদি নদী কি এই সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন। নদী পানিচক্রের অনেক বড় একটি অংশজুড়ে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত ।
 
শুধু তাই নয় এটি ভূপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক অবকাঠামোতে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। নদী নানান ভাবে আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদী ব্যতীত পানি চক্রের কার্যক্রম কোনোভাবেই সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। নদী বিভিন্নভাবে প্রকৃতিতে সৃষ্টি হতে পারে যেমন: প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারা থেকে নদী সৃষ্টি হতে পারে, জমাট বাধা বরফ থেকে নদী সৃষ্টি হতে পারে, তাছাড়া 
প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর সৃষ্টি হতে পারে।
 
আমরা জানি নদী যেখান থেকে তার যাত্রা শুরু করে তাকে নদীর উৎপত্তিস্থল বলে। সাধারণত নদীর উৎপত্তিস্থল গুলো পৃথিবীর উচ্চতম জায়গাগুলোতেই হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে তা বিভিন্ন অধ্যায় পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত মহাসাগর, সাগর কিংবা অন্য কোন নদীতে পতিত হয়।নদী স্থির নয় নদী সবসময় প্রবাহমান নদীর পানি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় প্রবাহ হয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে শুধু।

নদীর বৈশিষ্ট্য কি কি

নদীর প্রধান যে বৈশিষ্ট্যটি সেটি হচ্ছে উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে গমন করা।নদী সাধারনত যেখান থেকে নদী সৃষ্টি হয় তাকে নদীর উৎপত্তিস্থল বলা হয়। নদীর প্রবাহপথ সাধারণত সুউচ্চ ভূমি থেকে নিচের দিকে গমন করে এই পথে নদীর ধারা থাকে খরস্রোতা যেখানে মাটির ক্ষয় হয় প্রচুর। সমতল ভূমিতে নদীপথের এ গতি অনেকাংশে কমে যায় ফলে পলি জমে নতুন ভূমি সৃষ্ট হয় এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
 
এক্ষেত্রে নদী সোজা পথে অথবা আঁকাবাঁকা পথে গমন করে থাকে।দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ স্থান ভেদে নদী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ধারণ করে। বাংলাদেশে বড় নদী হচ্ছে যমুনা এবং ছোট অনেক নদী রয়েছে তার মধ্যে বালু নদী ঢাকায় একটি ছোট নদী হিসেবে পরিচিত।মোহনা যে স্থানটিতে গিয়ে একটি নদী মহাসাগর, সাগর অথবা অন্য একটি নদীর সাথে মিলিত হয় সেই এলাকাকে মোহনা বলা হয়। 

পলি জমে যেখানে ত্রিভুজ আকৃতি ভূমি তৈরি করে তাকে ডেল্টা মোহনা এবং নদী যেখানে সরাসরি সাগরে পতিত হয় তাকে এস্থুয়ারি মোহনা বলে। বাংলাদেশে অনেক নদী রয়েছে মূলত বাংলাদেশ একটি নদী প্রধান দেশ। নদী আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং আমাদের কৃষি জমি উর্বর করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে সুপ্রাচীনকাল থেকে।

মানব জীবনে নদীর উপকারিতা

মানব জীবনে নদীর উপকারিতা ব্যাপক। সৃষ্টি লগ্ন থেকেই মানুষ নদীর সাথে রেখেছে নিবিড় সম্পর্ক। আমাদের এই বাংলাদেশ সবুজে ঘেরা একটি প্রাকৃতিক দেশ যার নদীর সাথে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।মানুষ সৃষ্টির পরে থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য জীবনের প্রথমে কৃষি অধ্যায়ে পাড়ি জমিয়েছিল যা এখনো অববাহিকায় চলছে ।আর এ কৃষির সাথে রয়েছে নদীর এক গভীর সম্পর্ক যা আমাদের মানব জীবনকে এখনো প্রভাবিত করে।

দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার‌‌: নদী একটি একটি বিশাল জলরাশির ধারা। নদীর পানি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। নদীর পানি মানুষ এখন পর্যন্ত গোসলের ক্ষেত্রে, কৃষি সেচে এমনকি অনেক এলাকায় নদীর পানি পান করেও থাকে। অনেক এলাকা থেকে মানুষ এসে নদীর পাড়ে বসত বাড়ি গড়ে তুলছে নদীর বিভিন্ন উপকারিতার জন্য ।নদী এইভাবে 
আমাদের প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 
 
 
মৎস্য সম্পদ: নদীতে প্রচুর পরিমাণে ছোট বড় নানা প্রজাতির মাছ জন্মে।এই মাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আমিষ আমাদের মানব দেহের এই আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কেননা নদী হচ্ছে মাছের অন্যতম প্রধান একটি উৎস। নদীর উপর নির্ভর করে অনেক মানুষের জীবন জীবিকা বিশেষ করে যারা নদীতে মাছ ধরে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে এসব মানুষের কর্মক্ষেত্র গড়ে উঠেছে নদীর তীরে।

কৃষিকাজ: কৃষি কাজে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ নদীর তীরে গড়ে ওঠা পলি মাটি আমাদের কৃষিজমিকে উর্বর করে তোলে ফলে আমাদের কৃষি জমি অধিক কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে সহায়ক হয়। আমাদের দেশ যেহেতু একটি কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত সারাবিশ্বে এক্ষেত্রে কৃষির ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নদীর তীরে গড়ে ওঠা পলিমাটি কৃষির জন্য একদম উত্তম এবং স্বল্প খরচে কীটনাশক মুক্ত অধিক ফসল পাওয়া যায়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে: বিদ্যুৎ আমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। বিদ্যুৎ আমাদের জীবনকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে।এই প্রয়োজনীয় মূল্যবান বিদ্যুৎ টি আমরা আমাদের প্রাকৃতিক নদী থেকে উৎপাদন করতে পারি। বাংলাদেশের এমন অনেক নদী রয়েছে যেখানে নদীর স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় ।যেমন বাংলাদেশের কাপ্তাই নদী থেকে টার্বাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে যা আমাদের দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম 

নদী শুধু আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না পাশাপাশি নদী আমাদের দেশের সম্পদ যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাকা কে সচ্ছল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশের অনেক নদী বাণিজ্যিক নদী হিসেবে গড়ে উঠেছে যা আমাদের দেশের সাথে অন্য দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে এবং আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করছে।
 
পরিবহন ও বাণিজ্যঃ নদী আমাদের পরিবহনের জন্য প্রাকৃতিকভাবে নৌপথ তৈরি করে দেয় যা আমাদের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরো উন্নত এবং সহজ করতে সাহায্য করে।  নদী পথে যে কোন মালামাল সহজে পরিবহন করা যেতে পারে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমরা সহজে নদী পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি ও এবং বিভিন্ন দেশে আমাদের বিভিন্ন বাণিজ্য সম্পদ রপ্তানি করতে পারি যা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সহায়ক হয়।
 
শিল্প কারখানা ও উৎপাদনঃ আমাদের দেশে নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকম শিল্প কারখানা যেমন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর বরিশাল সহ বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন কাঁচামাল পণ্য উৎপাদন করতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয় যা আমরা সহজে নদী থেকে উত্তোলন করতে পারি। এবং বাণিজ্যিক পণ্য সহজে নদী পথের মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারি যা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচ্ছল রাখে।
 
পর্যটন শিল্পঃ নদীর প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন পর্যটক ঘুরতে আসে বিশেষ করে নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য স্বাস্থ্যসম্মত হাওয়া, নৌবিহার, মাছ ধরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন পর্যটক আমাদের দেশে এসে তারি জামাই যা আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে এবং বিভিন্ন ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

পরিবেশ রক্ষায় নদীর গুরুত্ব

পরিবেশ রক্ষায় নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সেই প্রাচীন শুরু লগ্ন থেকে। নদী একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল অন্যদিকে মানব জীবনে পরিবেশ রক্ষায় নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীর আমাদের নিত্য প্রতিদিন প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম মৌসুমে নদীর প্রাকৃতিক ঠান্ডা হাওয়া আমাদের পরিবেশকে শীতল করে এবং উষ্ণতা দূর করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। 
 
 
এছাড়াও নদী আমাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। প্রচন্ড বন্যায় যখন চারিদিকে প্লাবিত হয়ে যায় তখন বন্যার পানি নদীর বুকে টেনে নেয় এবং আমাদের বন্যার অতিরিক্ত পানি থেকে আমাদের ঘরবাড়ি কৃষি ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। নদী এলাকায় বৃষ্টি বেশি হয় দেখে ফসল পান করতে তেমন বেশি পানির প্রয়োজন হয় না এবং নদী এলাকার মাটি উর্বর হয় এতে কীটনাশক সার ছাড়াই কৃষি ফসল ভালো জন্মায় যা আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব

নদী প্রাচীন মানুষের জীবন জীবিকার একটি প্রাণকেন্দ্র ছিল। নদীর ওপর নির্ভর করে প্রাচীন যুগের মানুষ তাদের বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। আমাদের অনেকেরই জানা মিশরের নীলনদে গড়ে উঠেছিল মিশরীয় সভ্যতা এছাড়াও ভারতের সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল সিন্ধু সভ্যতা এবং মেসোপটেমিয়ার টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল মেসোপটে নিয় সভ্যতা। নদীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখানে মানুষ জনবসতি গড়ে তুলেছিল ।
 
 
নদীর মাটি উর্বর এবং পানির ব্যবস্থা থাকায় সহজে ফসল উৎপন্ন করতে পারত। এবং জীবন যাপনের প্রতিটি কাজে তারা পানির ব্যবহার করতে পারত। প্রাচীনকালের পরিবহনের  পথ ছিল নদী। নদী চলাচলের মাধ্যমে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া আসা করত আর এখান থেকেই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সভ্যতা। গড়ে উঠতে থাকে। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ নদীকে ধর্মীয়ভাবে বিশ্বাস করত তারা মনে করত নদী একটি পবিত্র স্থান। 
 
নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মন্দির পূজা পাঠশালা গড়ে উঠেছিল এখনো পর্যন্ত এই সভ্যতাগুলো রয়ে গেছে। নদীর পানিকে পবিত্র পানি মনে করা হয়। প্রাচীনকালে মানুষ নদী থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় নদীকে তাদের দেবতার আসরে বসিয়েছিল। প্রাচীনকালে মানুষ নদীকে কৃষি ধর্ম সংস্কৃতি যোগাযোগ সবকিছুতে নদীর ব্যবহার করে এসছে এক্ষেত্রে নদী ছাড়া প্রাচীন সভ্যতা কল্পনা করা যায় না।

নদী দূষণ রোধে করণীয়

নদী আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। নদী দূষিত হলে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ শুধু নষ্ট হবে না সাথে আমাদের মানবজীবন হুমকির দিকে পড়বে। কারণ নদী শুধু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে না নদী জীব বৈচিত্র সহ আমাদের মানব জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নদী দূষিত হলে আমাদের মানব জবন  হুমকির মুখে পড়বে। নদী দূষণ রোধে আমাদের করণীয় পদক্ষেপ সমূহ। 
 
ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধিঃ নদী আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ এ নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে সর্বপ্রথম আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা অনেক সময় প্লাস্টিকের বোতল পলিথিন এ ছাড়া আরো আবর্জনা নদীতে ফেলে দিয় এসব নোংরা জিনিসপত্র নদীর পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকবো এবং অন্য কেউ নির্দেশনা দেব।আমরা এই সকল জিনিস একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবো এতে আমাদের নদীর পানি দূষণমুক্ত থাকবে।
 
শিল্পকল কারখানার বজ্র নিয়ন্ত্রণঃ বর্তমানে শিল্প কলকারখানার পরিমাণ দিন বেড়ে চলেছে এবং এসব শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে ঠিক নেই। শিল্পকল কারখানার বজ্র পদার্থ প্রতিনিয়ত নদীর সাথে মিশে যাচ্ছে এবং নদীকে দিনের পর দিন দূষিত করে ধ্বংস করে দিচ্ছে এটা আমাদের পরিবেশকে হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পরিবেশ দূষণ রোধে অবশ্যই শিল্প কারখানার শোধনাগার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
 
কৃষি ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ বাংলাদেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল একটি দেশ। বর্তমানে ইদানিং কৃষি চাষে অধিক ফলনের আশায় জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক সার ব্যবহার করছে যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। পাশাপাশি বৃষ্টিতে ফসলের মাঠ ধুয়ে বিষাক্ত পানি নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।এক্ষেত্রে আমাদের জৈব সারের বেশি প্রয়োগ করতে হবে এবং কীটনাশক প্রয়োগ কমিয়ে নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে পারি।
 
সরকারি নীতিমালা ও আইন প্রয়োগঃ নদী দূষণ রোধে অবশ্যই সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এক্ষেত্রে যারা নীতিমালা লঙ্ঘন করবে তাদের ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে যে সকল কলকারখানা অবৈধ ভাবে তৈরি এবং শোধনাগার যথেষ্ট ভাবে সম্পাদন করা নেই সে সকল কল কারখানা গুলো বন্ধ করে দিতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট সরকারকে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

নদীর অপকারিতা সমূহ 

সাধারণত নদী আমাদের প্রাকৃতিক বন্ধু কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানব জীবন এবং জীববৈচিত্র্যে নদীর অপকারিতা দেখা যায়। নদী একদিকে প্রকৃতি এবং জীব বৈচিত্র জন্য আশীর্বাদস্বরূপ অন্যদিকে নদীর কিছু কিছু ভয়াবহ রূপ প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের জন্য হুমকি শুরু হয়ে দাঁড়ায় । নিচে নদীর কিছু অপকারিতা বর্ণনা করা হলো। 
 
বন্যাঃ অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়াতে নদীর পানি ভরে যায় এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এতে অনেক সময় বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বন্যার ফলে বিভিন্ন ঘর বাড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়। আমাদের অনেক কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক জীব জন্তু মারা যায় এতে আমাদের অনেক অর্থ সম্পদ নষ্ট হয় এবং সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।
 
নদী ভাঙ্গনঃ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বসতবাড়ি ভিটে। বিভিন্ন অসহায় মানুষ জীবনের জীবিকার তাগিদায় নদীর তীরে গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার ফলে বছরে বছরে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অনেক বসত বাড়ি ভেঙ্গে নদী গ্রাস করে নিয়ে যায়। অনেক কৃষক নদীর জমি উর্বর থাকায় সেখানে কৃষি ফসল চাষ করে। কিন্তু নদী ভাঙ্গনের ফলে এই জমিগুলো ভেঙ্গে যায় এবং এবং অসহায় মানুষগুলো তাদের ফসল হারিয়ে পেলে ফেলে।
 
জলজ জীবনের ক্ষতিঃ শিল্প কল কারখানার বিভিন্ন বজ্র পদার্থ নদীর পানিতে মিশে নদীর পানি দূষিত করে । এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল এবং পলিথিন ফেলে থাকি এ সকল পদার্থ নদীর পানিকে দূষিত করে। নদীর পানি দূষিত হলে এর প্রভাব গিয়ে নদীর জলজ প্রাণী মাছ, কাকড়া, কচ্ছপ এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রাণীর জীবন হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় ।
 
মানব জীবন হুমকিস্বরূপঃ নদীর পানি দূষিত হওয়ার ফলে এখানে নদীর বাতাস থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়াতে থাকে । এছাড়া নদীর পানি আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি এক্ষেত্রে নদীর পানি ব্যবহারে ফলে বিভিন্ন চর্মরোগ কলেরা ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগের আক্রান্ত হতে পারি যা মানব জীবনের জন্য অত্যান্ত হুমকি স্বরূপ এছাড়ও জীবাণু পানিতে বিভিন্ন মশার উৎপন্ন হয় এ থেকে আমরা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারি।

শেষ কথাঃ নদী কি ?নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা

নদী কি এবং নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আশা করি আপনারা ভালোভাবে জেনেছেন। আমাদের বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ আমাদের দেশে ছোট বড় অনেক নদী রয়েছে এ সকল নদী যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায় অন্যদিকে নদী আমাদের বিভিন্ন ভাবে মানব জীবনে বিভিন্ন জীব বৈচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদী আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ পাশাপাশি নদী আমাদের প্রাকৃতিক বন্ধু।
 
নদীর ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে সে প্রাচীন কাল থেকে মানুষ নদীর উপকারিতা উপভোগ করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের জনসাধারণের অসচেতনার কারণে নদী আমাদের মানব জীবনে উপকারিতার পাশাপাশি অপকার বয়ে আনছে। আমরা সবাই সচেতন হব এবং নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে চেষ্টা করব পাশাপাশি সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।


 






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সেভাঘর ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন '#'

comment url