পাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান
পাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান রয়েছে আজকে আপনাদের সাথে সবগুলো স্থান নিয়ে
আলোচনা করব। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন বিশেষ করে ভ্রমন প্রিয়াসু বন্ধুগন।আমরা
সবায় ভ্রমন করতে ভালোবাসি বিশেষ ভাবে জন্মলগ্ন থেকেই যেন আমাদের সবার প্রকিতির
উপর আলাদা মায়া কাজ করে।
পাকিস্থানের চারিদিকি রয়েছে অসাধারন সৌন্দর্য যা আমাদের জানার বাহিরে।এই
সকল অজানা বিষয় গুলো জানাতে আজকের এই মুল্যবান লিখাগুলা আপনাদের জন্য
বন্ধুগন।আজকের আর্টিকেল পড়ার পরে পাকিস্তান ভ্রমনের প্রতি আপনাদের আগ্রহ বেড়ে
যাবে ইনশাআল্লাহ।
পোস্ট সুচিপত্রঃপাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান
- পাকিস্তানের ঐতিহাসিক স্থান মিনার ই পাকিস্তান
- পাকিস্তানের অন্যতম প্রাকিতিক সৌন্দর্যের স্থান হুনজাভেলি
- পাকিস্তানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সোয়াত ভেলি
- পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান মহেঞ্জোদারো
- ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন ফয়সাল মসজিদ
- পাকিস্তানের পর্যটন স্থান সাইফুল উল মুলুক
- পাকিস্তানের বিখ্যাত পর্যটন স্থান নীলমভ্যালি
- পাকিস্তানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান মুরী পাহাড়
- পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর স্থান ফেয়ারি মেডোস
- লেখকের শেষ কথাঃপাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান সম্পর্কে
পাকিস্তানের ঐতিহাসিক স্থান মিনার ই পাকিস্তান
- পাকিস্তানের ঐতিহাসিক স্থান মিনার ই পাকিস্তান হলো পাকিস্তানের একটি প্রতীকি স্থাপত্য শৈলী। এটি পাকিস্তানের লাহোর শহরের সুপরিচিত ও ঐতিহাসিক ইকবাল পার্কে অবস্থিত। এটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি চিহ্নবিশেষ। এই স্থানটিতে ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত করার জন্য ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। আপনারা যারা ঐতিহাসিক বিষয়ে জানতে বেশি আগ্রহী তাদের জন্য ভ্রমণটি শিক্ষা মুলক ভ্রমন।
-
মিনারটির উচ্চতা ২৩০ ফুট। এটি নির্মাণ কাজ ১৯৬০ সালে শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালে
শেষ হয়। এই মিনারের আরেকটি বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে মিনারের দেয়ালে বাংলা, উর্দু
এবং ইংরেজি ভাষায় লাহোর প্রস্তাবটি লিখিত রয়েছে। এখানে রয়েছে আরো বিশেষ
বিশেষ সৌন্দর্যের স্থান মিনারের চতুর্পাশে বিশাল একটি পার্ক রয়েছে যা
পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত এটির নাম ইকবাল পার্ক।
- মিনারটিতে প্রবেশের জন্য কোন ধরনের ফি প্রদান করতে হয় না তবে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা রয়েছে। এখানে বসার জন্য রয়েছে আরামদায়ক স্থান, শিশুদের খেলার স্থান এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। আরেকটু দূরত্বে প্রায় ১০ মিনিটের পথ অতিক্রম করলে রয়েছে ঐতিহাসিক বাদশাহী মসজিদ যা পাকিস্তানের সেরা মসজিদের মধ্যে একটি। ৩০ মিনিটের পথ অতিক্রম করলে দেখা মিলবে শালিমার গার্ডেন যা সবুজ সাম্রাজ্যে বিখ্যাত মুঘল আমলের বিখ্যাত বাগান।
- আরো রয়েছে বিখ্যাত সম্রাট শাহজাহান জাহাঙ্গীরের সমাধি এবং লাহোর চিড়িয়াখানা এই চিড়িয়াখানাটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত চিড়িয়াখানা। এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আনারকলি বাজার এখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাদ্য এবং বিভিন্ন হস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত । পর্যটকরা এখানে ভ্রমণের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন ও তথ্য খুঁজে পাবেন।মিনার ই পাকিস্তান ভ্রমণের মাধ্যমে কেবলমাত্র সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন তা নয় জানতে পারবেন একটি রাষ্ট্রের জন্ম লগ্নের গল্প।
পাকিস্তানের অন্যতম প্রাকিতিক সৌন্দর্যের স্থান হুনজাভেলি
- পাকিস্তানের অন্যতম প্রাকিতিক সৌন্দর্যের স্থান হুনজা ভ্যালি সৌন্দর্যমন্ডিত একটি দর্শনীয় স্থানের নাম। আপনারা কি জানেন এটি পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত একটি মনোরম উপত্যকা। এখানকার পাহাড় গুলোর চূড়া তুষারের চাদরে ঢাকা এবং প্রাণ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। এটি কারাকোরাম পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
- হুনজা ভ্যালি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত১.উপরের হুনজা২.মধ্য হুনজা ৩.নিচের হুনজা।পাহাড়ে যারা ট্র্যাকিং করে তাদের হৃদয় আকর্ষণ করার মত কয়েকটি তুষার আবৃত পাহাড় এখানে রয়েছে যেমন: লেডি ফিঙ্গার পিক, রাকাপোশী, দিরান পিক অন্যতম।এছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ কিছু লেক তার মধ্যে ২০১০ সালে ভূমিধসের ফলে সৃষ্টি হয় আতাবাদ লেক।এর নীল স্বচ্ছ জল পর্যটকদের বিশেষভাবে বিমোহিত করে। এছাড়া হুনজা নদী পুরো উপত্যকা জুড়ে প্রবাহমান।
- এখানে চাষ হওয়া ফসলি জমি এবং ফলের বাগান গুলো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহুগুনে বাড়িয়ে তুলেছে যা পর্যটকদের বহু গুনে আকর্ষণ করে।চেরি,এপ্রিকট এবং আপেল এখানকার প্রধান ও বিখ্যাত ফল হিসেবে সুপরিচিত।পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে ট্রাকিং ও হাইকিং এর ব্যবস্থা। হুনজা থেকে আরম্ভ করে রাকাপোশী বেস ক্যাম্প,পাসু গ্লেসিয়ার ও কারাকোরাম হাইওয়ের নানান রুটে ট্রেকিংয়ের সুবিধা রয়েছে।ট্র্যাকিং প্রেমিদের জন্য প্রিয়তম স্থান।
- প্রায় এক ঘন্টার দূরত্বে রয়েছে নীল পানির বৈশিষ্ট্য আতাবাদ লেক যা ২০১০ সালে ভূমিধসের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে ভ্রমণকারীরা আসে আতাবাদ লেকের পাহাড়ি দৃশ্য এবংমনমুগ্ধকর নীল জলের স্রোত উপভোগ করতে এছাড়াও এখানে বোটিং এবং পিকনিক স্পটের জন্য এ জায়গাটি বিখ্যাত। এছাড়াও হুনজা ভ্যালির কিছু দুরত্বে রয়েছে গোজাল ভ্যালি তুষারবৃত্ত পর্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ শান্তিময় ছোট ছোট গ্রাম যা আপনাকে মুগ্ধকর করে তুলবে। প্রকৃত প্রেমী ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান হুনজাভেলি।
পাকিস্তানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সোয়াত ভেলি
- পাকিস্তানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সোয়াত ভেলি এটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি সুপরিচিত এলাকা। এটি পাকিস্তানের সুইজারল্যান্ড হিসেবে বিবেচিত। সোয়াত ভ্যালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বরফে ঢাকা পাহাড়, আয়নার মত স্বচ্ছ পানির নদী এবং সবুজ উপত্যকার জন্য প্রসিদ্ধ। এটি হিন্দুকুশ পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত এবং সোয়াত নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত।
- সোয়াত ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠের ৯৫০ মিটার থেকে ৬০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মিংগোরা এখানকার প্রধান শহর হিসেবে বিবেচ্য। এখানকার সুপ্রাচীন বুদ্ধমূর্তি সমৃদ্ধ এলাকা গুলোকে কেন্দ্র করে বহু সংখ্যক পর্যটকদের সমাগম হয়ে থাকে। প্রাচীনকালের অনেক বুদ্ধমূর্তি, প্রাচীন স্তুপ এবং বুদ্ধ বিহারের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১১ শতাব্দীতে মুসলিম শাসকগণের আগমনের কারণে এলাকাটি মুসলিম সংস্কৃতি হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠে।
- নারীদের শিক্ষার অধিকার লাভের জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী একটি পরিচিত নাম হচ্ছে মালালা ইউসুফজাই। এই মালালা ইউসুফিজাইয়ের জন্মস্থান হচ্ছে সোয়াত ভ্যালি। এখানে আগত পর্যটকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে মালাম জাব্বা। এটি পাকিস্তানের মধ্যে অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্কি রিসোর্ট। তাছাড়া এখানকার কালাম ভ্যালিতে রয়েছে শুভ্র বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়, স্বচ্ছ জলের হ্রদ এবং ঝরনা যা পর্যটকদের দৃষ্টি এবং মন হরণ করতে পারে।
- মাহোদান্দ লেকটি কালাম ভ্যালির অতি নিকটে অবস্থিত যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সোয়াত ভ্যালির অর্থনীতি সাধারণত পর্যটন শিল্প, কৃষি এবং হস্ত শিল্পের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। চেরি, আপেল এবং আড়ু ফলগুলো এখানে অধিক পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে। আপনারা সোয়াত ভ্যালি ভ্রমণ করলে অবশ্যই মালালা জাব্বা এবং কালাম ভ্যালি অবশ্যই দেখা উচিত এখানে শীতকালে স্কি রিসোর্ট এবং গরমকালে হ্যাকিং ও ক্যাম্পিং বিশেষভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান মহেঞ্জোদারো
- পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান মহেঞ্জোদারো প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম পাকিস্তানি ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান। মহেঞ্জোদারো স্থানহারিয়ে যাওয়া এক বিস্ময়কর সভ্যতার নাম মহেঞ্জোদারো যার অর্থ ''মৃতদের টিলা''। ইন্দাস ভ্যালি সিভিলাইজেশনের কেন্দ্রীয় একটি শহর যা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত একটি সুপ্রাচীন অঞ্চলের নাম। এই স্থানটি আনুমানিক ৪৫০০ বছরের প্রাচীন পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান।
- বর্তমানে এই নগরটি তৎকালীন উন্নত স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে। বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক হৃদয়নাথ সরকার দ্বারা ১৯২২ সালে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কৃত হয়। এটি পাকিস্তানের লারকানা জেলার নিকটে অবস্থিত অঞ্চলটি মূলত উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ার এলাকা হিসেবে বিবেচিত। অঞ্চলটি মূলত সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছিল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির আশেপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ।
- অবাক করা বিষয় হলো প্রায় ৪৫০০ বছর পূর্বেও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল এবং উন্নত। অঞ্চলটির রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছিল গ্রিড প্যাটার্নে। মহেঞ্জোদারো শহরটির একটি বিখ্যাত অবকাঠামো হলো "দ্য গ্রেট বাথ"। এটি তৎকালীন সময়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও শুদ্ধিকরণের জন্য বাথিং পুল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রায় ২.৪ মিটার গভীরতার এই স্নানপাত্রটি আজও পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
- মহেঞ্জোদারোতে ভ্রমণের জন্য শীতকাল সবচেয়ে উপযোগী সময় কেননা গ্রীষ্মকালে এখানে প্রচুর গরম থাকে ফলে ভ্রমণে অসুবিধা হতে পারে। এখানে যেতে বিমান পথে শুক্কুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন যা মহেঞ্জোদারো থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়াও করাচি বা লারকানা শহর থেকে খুব সহজেই সড়ক পথে এখানে যাওয়া যায়। লারকানা শহরে অবস্থান করছে শাহ বাহার মাজার এখানে প্রাচীন আমল থেকে স্থানীয় মুসলিমরা প্রার্থনার জন্য এখানে আসেন ।
ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন ফয়সাল মসজিদ
- ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন ফায়সাল মসজিদ তৎকালীন সৌদি আরবের বাদশা শাহ ফয়সালের উপহার হিসেবে পাকিস্তানের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পাকিস্তানের বৃহত্তম ও প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে এটি বহুল পরিচিত। এই মসজিদটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য কেবলমাত্র ইবাদতের স্থান নয় বরং আধুনিক স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহ্যের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ।
- এই মসজিদটি ইসলামাবাদের মারগাল্লা পাহাড়ের পাদদেশে স্থাপিত হওয়ায় এটি পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখা যায়। স্থানটি অত্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও শান্ত হওয়ায় এটি পর্যটকের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সৌদি বাদশা শাহ ফয়সালের অর্থায়নে ১৯৭৬ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৬ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। তুরস্কের বিখ্যাত স্থপতি ভেদাত দালোকে এই মসজিদের নকশা তৈরি করেন।এই মসজিদে কোন গম্বুজ নেই।
- এছাড়াও এটি দেখতে অনেকটা তাঁবুর ন্যায় যা মুসলিম ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার পরিচয় বাহক। এতে রয়েছে ৮০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট চারটি মিনার যা তুরস্কের স্থাপত্য শৈলীকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অভ্যন্তরীণ প্রার্থনা কক্ষে একসঙ্গে ১০০০০ মানুষ ইবাদত করতে পারে এবং পুরো প্রাঙ্গণে ৯০০০০থেকে ১০০০০০ মানুষ সমবেত হতে পারে। ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি ফুটিয়ে তুলতে মসজিদের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয়েছে মার্বেল ও মূরাল শিল্প।
-
ফয়সাল মসজিদ ও তার চারপাশের সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য আপনারা আকাশ পথে,
সড়কপথে খুব সহজেই যেতে পারবেন। ফায়সাল মসজিদের সামান্য ১৫ মিনিটের দূরত্বে
অবস্থান করছে লেকপার্ক যা ইসলামাবাদের একটি অন্যতম পার্ক হিসেবে পরিচিত। এই
পার্কের বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং একটি লেক যেখানে বোটিং করা
যায়, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর জন্য পিকনিক স্পট যা আপনাকে প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করবে।
- ২০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে ইসলামাবাদ ফোরাম যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ছোট ছোট পশু চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি যা পর্যটকদের আকর্ষিত করে বিশেষ করে শিশুদের জন্য অন্যতম সৌন্দর্যের স্থান। পাশেই রয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ফুলের বাগান প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা হাওয়া উপভোগ করতে অনেকে এখানে আসেন।
- ফাইসাল মসজিদ থেকে দশ মিনিটের ধরতে ইসলামাবাদে রয়েছে আরেকটি সৌন্দর্য নিদর্শন মুনাল রেস্টুরেন্ট যা মার্গালা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। মসজিদের অভ্যন্তরে ছবি তোলার সময় অনুমতি নিয়ে নিবেন এবং শালীনতা বজায় রাখবেন। মসজিদের ইতিহাস সম্বন্ধে সুস্পষ্ট তথ্য নিতে ভ্রমণ গাইড ভাড়া করুন।সবমিলিয়ে আমি বলতে পারি আপনাদের ভ্রমনের জন্য অনেক সুন্দর একটি স্থান ফাইসাল মসজিদ।
পাকিস্তানের পর্যটন স্থান সাইফুল উল মুলুক
- পাকিস্তানের পর্যটন স্থান সাইফুল উল মুলুক একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে প্রতিটি ভ্রমণ প্রিয় বন্ধুদের জন্য। সাইফুল উল মূলক মূলত তুষার পর্বত দ্বারা বেষ্টিত একটি সৌন্দর্য পূর্ণ লেক। তার সৌন্দর্য আরো বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে তার নিলাভ-সবুজ বর্ণের পানির জন্য যা পর্যটন প্রিয় বন্ধুদের আরো বিমোহিত করে। সাইফুল উল মুলুক লেকের নামকরণের পেছনে একটি আশ্চর্যজনক রহস্য খুঁজে পাওয়া যায়।
- সাধারণত এ নামটি এসেছে সাইফুল উল মুলুক নামের এক রাজপুত্র এবং সেই পর্বতের এক পরীর প্রেম কাহিনী থেকে। এ বিষয়টি জানতে সবাই আগ্রহী হয়ে থাকেন সেখানে বেড়াতে গেলে হয়তো পুরো বিষয় সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবে জানতে পারবেন। সেখানকার মানুষের বিশ্বাস যে রাতে সেখানে বিভিন্ন ধরনের নানান রকম সৌন্দর্যের পরীদের আগমন ঘটে। আপনি যদি এই সৌন্দর্য স্থানের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে চান তাহলে ভ্রমণ করার জন্য আপনাকে গ্রীষ্মকালের দিকে যেতে হবে।
-
আপনি এখানে ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য জিপ বা ঘোড়া ব্যবহার করে ভ্রমন করতে পারেন।
সাইফুল উল মুলুক লেকের পানিতে তুষার বৃত্ত পাহাড়ের প্রতিফলন , পাহাড়ের পাশ
দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট ঝর্ণার স্রোত , স্বচ্ছ পানির নিলাভ সবুজ বর্ণ আকার
এবং গ্রীষ্মের সময় গরম কালে বরফ গলে গলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে এই
দৃশ্যগুলো দেখতে প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজারো হাজার মানুষ প্রতিটি মুহূর্তে
ছুটে আসছে।এখানেই সৌন্দর্য শেষ হয়নি পাশেই রয়েছে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পর্যটন
স্থান সাইফুল উল মুলুক
- ভ্রমন প্রিয়দের জন্য রয়েছে প্রায় এক ঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত প্রাকৃতিক আর এক সৌন্দর্য লালুজার যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চারণভূমি এবং ফুলের জন্য বিখ্যাত এখানে অনেকেই পিকনিকের জন্য ভ্রমন করতে আসে। তার একটু পাশে রয়েছে বাবুসর টপ নামে আরেকটি বিখ্যাত জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে কাগান উপত্যকার পুরো দৃশ্য উপভোগ করা যায়।লেকে যাওয়ার পথে আরো উপভোগ করবেন বয়ে যাওয়া কাগান নদীর সৌন্দর্য।
- সাইফুল উল মুলুক থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের দূরত্বে চায়ের কাপের মতো একটি লেক দেখা যায় যা পাইকা লেক নামে পরিচিত ।এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে যা পাইকা ঝর্ণা নামে পরিচিত। আরো রয়েছে নরেন বাজার নামে একটি ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত বাজার যেখানে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আর দেরি না করে চলে আসুন পাকিস্তানের সাইফুল উল মুলক লেকের তীরে।
পাকিস্তানের বিখ্যাত পর্যটন স্থান নীলমভ্যালি
পাকিস্তানের বিখ্যাত পর্যটন স্থান নীলমভ্যালি আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলের জন্য
বিখ্যাত । এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক নিদর্শন প্রতিটি পর্যটককে আকর্ষিত ও প্রাণবন্ত
করে। কাশ্মীর কথাটির সাথে প্রায় সবাই পরিচিত সবার কাছে যেন এটি একটি স্বর্গীয়
জায়গা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নদীর জলধারা স্রোত,
চারিদিকে আবৃত তুষার বৃত্তে ঢাকা পাহাড় এবং ঘন সবুজে চারিদিকে ঘেরা বিশাল
বনভূমি বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনমুগ্ধ করে।
কাশ্মীরের পুরো ভ্যালিটি প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যা কাশ্মীরের অতি সৌন্দর্য
নিলম নদীর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে রয়েছে। কাশ্মীরের নীলম নদীর
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষিত করে বিশেষ করে যখন পর্যটকরা নদীর ধারে
বসে নদীর চারপাশে সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উপত্যকার চারিদিকে আবৃত
পাহাড় এই সকল সৌন্দর্য পর্যটকরা উপভোগ করতে থাকে এবং এর সৌন্দর্য্য মুগ্ধ হতে
থাকে। এখানেই শেষ নয় কাশ্মীরের আশেপাশে রয়েছে আরো অনেক সৌন্দর্য ।
কিছু দূর অতিক্রম করলে দেখা মেলে আরাংকেল নামে ছোট্ট একটি গ্রাম এই গ্রামটি
বিশেষভাবে স্বর্গের বাগান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এই ছোট্ট গ্রামে চারিপাশ
দিয়ে রয়েছে তুষার আবৃত পর্বতমালা যা ছোটদের মুগ্ধ করে। কিছু দূর গেলেই
অবস্থান করছে কেরান নামক এক গ্রাম। এই গ্রামটি ভারতীয় কাশ্মীর এবং পাকিস্তানি
কাশ্মীরের সীমানায় অবস্থিত এই গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর এই গ্রামে
মধ্যে প্রবেশ করলে ২ প্রান্তের সীমানার সুন্দর গ্রামগুলো দেখা যায় যা
পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি করে।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান মুরী পাহাড়
পাকিস্তানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান মুরী পাহাড় ভ্রমণ পিয়াসু বন্ধুদের জন্য খুবই
সুন্দর একটি আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে ভ্রমণ করতে আসলে মুরী পাহাড়ের অপরূপ
সৌন্দর্য আপনার মন স্নিগ্ধ ও শীতল করে তুলবে। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনি গরম
কালের উষ্ণ ছুটি উপভোগ করতে আসতে পারেন এছাড়াও শীতের সময় শীতের তুষার উপভোগ
করতেও আসতে পারেন। মুরী পাহাড়টি অবস্থান করছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে যা
পাকিস্তানের রাওয়াল পিন্ডি শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে।
পুরো পাহাড়টি প্রায় ২,২৯১ মিটার এবং ৭, ৫১৬ ফিট উচ্চতা নিয়ে অবস্থান করছে
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ। পাহাড়ের চারি এলাকা চির সবুজে ভরপুর একটি
মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এই এলাকাটি ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের কাছে
একদম আরামদায়ক স্থান এখানে গরমের উষ্ণ আবহাওয়া এবং শীতকালের প্রচন্ড
তুষারের সৌন্দর্য পর্যটকদের আরো আকর্ষণ করে। এখানেই শেষ নয় আশেপাশে রয়েছে
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য আরো অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
মুরী পাহাড় থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে প্যাট্রিয়াটা যা নিউ মুরী নামে
পরিচিত। প্যাট্রিয়াটা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জন্য বিখ্যাত এবং এই জঙ্গলে রয়েছে
বিভিন্ন রকম পশু পাখি যা পর্যটকদের ভ্রমণকে আকর্ষিত করে। বিশেষ করে পেট্রিয়ার
সবচেয়ে আকর্ষিত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে কেবল কার ও চেয়ার লিফটের জন্য। দীর্ঘ কেবল
কার পর্যটক কে চমৎকারভাবে পুরো এলাকাকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেয় এবং চেয়ার
লিফট সবুজ বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে
সাহায্য করে।
পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর স্থান ফেয়ারি মেডোস
- পাকিস্তানি রোমাঞ্চকর স্থান ফেয়ারি মেডোস যা একবার চোখে দেখলে অন্তরে গেঁথে রাখার মত যাকে বলা হয় পরীদের ভূমি। আপনি যদি ভ্রমণ করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে দেরি না করে ঘুরে আসুন পাকিস্তানের সেই রোমাঞ্চকর স্থান ফেয়ারি মেডোসে। পাকিস্তানের সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভূমি গিলগিত বালিতিস্তানে ফেয়ারি মেডস এর অবস্থান।ফেয়ারি মেডোস পাকিস্তানের অতি আকর্ষণীয়ও স্থান।
- ফেয়ারি মেডোস এত আকর্ষিত হওয়ার কারণ হল এ ফেয়ারি মেডোস থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বত গুলোর মধ্যে নবম তম নাঙ্গা পর্বতের চূড়া দেখা যায় যা পর্যটকদের আকর্ষিত করে। এই সৌন্দর্যে ভরপুর নাঙ্গা পর্বতের উচ্চতা ৮,১২৬ মিটার প্রায়। এটা অনেকের কাছে killer mountain নামে পরিচিত পেয়েছে কারণ পর্বত রোহীদের জন্য যেমন আকর্ষণের ঠিক তেমনি আশঙ্কাজনক এর জন্য এই নামে পরিচিত।
- এছাড়াও এখানে রয়েছে আরো অনেক সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেমন চারিদিকে সবুজ তৃণভূমি, তুষারবৃত্ত পাহাড় চারিদিকে শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ প্রকৃতির গুনগুন। বিশেষ করে যারা ক্যাম্পিং করতে চান তাদের জন্য ফেয়ারি মেডোস অত্যন্ত জনপ্রিয়। আপনার ভ্রমণকে আরো আকর্ষিত করতে এখানে রয়েছে রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য ট্রাকিং রুট যা রায়কোট সেতু থেকে ফেয়ারি মেডোস পর্যন্ত অবস্থিত।
- এখানেই শেষ নয় আশেপাশে রয়েছে আরও সৌন্দর্যের অনেক স্থান যা আপনার ভ্রমণকে আরো শান্তিপ্রিয় মনমুগ্ধকর করে তুলবে। ফেয়ারি মেডোস থেকে অল্প একটু দূরেই রয়েছে হট স্প্রিং বা তাত্তা পানি এখানে প্রকৃত প্রেমীরা হট স্প্রিং এবং প্রকৃতির শান্তি উপভোগ করতে আসে। পাশেই রয়েছে আকর্ষিত সৌন্দর্যে ভরপুর জেল লেক। আপনারা যারা পিকনিক প্রেমী পিকনিক স্পট খুঁজছেন ভাবছেন কোথায় যাব আপনারা তারা দেরি না করে চলে আসুন ফেয়ারি মেডোসে। পাশাপাশি রয়েছে থাকা খাওয়ার নানান রকম সুবিধা।
লেখকের শেষ কথাঃপাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান সম্পর্কে
পাকিস্তানের সেরা দর্শনীয় যত স্থান সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি আশা
করি ভ্রমন প্রিয় বন্ধুগন আপনারা সবগুলো বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত
হয়েছেন।পাকিস্তান সত্যিই এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ।এখানেই শেষ নয় এখানে
ভ্রমন করতে গেলে জানতে পারবেন অনেক ঐতিহাসিক ইতিহাস এবং নিদর্শন সম্পর্কে যা
আপনার জ্ঞান কে আরো প্রসারিত করে তুলবে।
পাকিস্তানকে সৌন্দর্যে রুপান্তরিত করেছে চারিদকের তুষার বরফে ঢাকা আবৃত
পাহাড় ও পর্বতমালা এছাড়াও রয়েছে অনেক নদনদী ও সবুজে ঘেরা প্রাকিতিক সৌন্দর্য যা
পাকিস্তানের ভুমিকে সতেজ রেখেছে।জ্ঞানকে প্রসারিত করতে রয়েছে বিভন্ন জানা অজানা
ঐতিহাসিক নিদর্শন। তাহলে বন্ধুরা আর দেরি কিসের চলুন ঘুরে আসি পাকিস্তান
থেকে সাথে উপভোগ করে আসি সকল সৌন্দর্য। আল্লাহ হাফেজ বন্ধুগন সবাই ভালো
থাকবেন।
সেভাঘর ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন '#'
comment url